অন্ধকারের প্লাবন
Picture Credit: Nuran Durdany |
ইনবক্সে একটা মেইল আসলো। সেখানের কথাগুলো পড়ে মনে হলো কেনো আসলো? কেনো এতোগুলো বছরপর? আর মানুষের ভাবনা গুলো কত বেশি পরিবর্তীত। বহমান স্রোতে মানুষ রূপে প্রত্যেকেই এক-একটা যন্ত্রমানব, রোবট!
গতরাতে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তা
দিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ একজন ডেকে বলল; তুমি প্লাবন না? আমি প্রথমে চিনতে পারিনি, তাই অবাক
হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। একটু পর ভদ্রলোকের চেহারাটা চেনা চেনা লাগলো কিন্তু পুরোপুরি
ভাবে মনে করতে পারছিলাম না। ভদ্রলোক বলে বসলেন; কোথায়
যাচ্ছো? আর রাস্তা মাঝখান দিয়ে হাঁটছো কেনো? বাসার সবাই কেমন আছে? বাসায় আসো না কেনো? অনেক দিন পর তোমাকে পেলাম। একদিন
সময় করে বাসায় চলে এসো, আমিতো একাই হয়ে গেলাম। আড্ডা দেওয়া যাবে। ভালো থেকো কেমন! রিক্সায়
চড়ে চলে গেলেন। ভদ্রলোকের একটা কথারও কোন জবাব দিতে পারলাম না। নিজের চারপাশে
তাকিয়ে দেখলাম, সত্যি আমি রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছি!
আজ বাসায় ফিরলাম এগারোটায়। রুমে
প্রবেশের সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেলো। প্রতিদিন কারেন্ট চলে গেলে আমার রুমে চার্জ
লাইট জ্বালাই, কিন্তু ইচ্ছে করলো না বরং একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে বসি। কত দিন যে
মোমবাতির আলোয় রুমটা ছায়ায় ঘেঁষে আলোকিত হয়না। মোমবাতিটা জ্বালানোর পর কেনো যেনো
মনে এলো, ডায়েরী লিখি না বহুদিন। একসময়ে খুব ডায়েরী লিখতাম। তখন নিজের ভিতর অন্যরকম
অনুভূতি কাজ করতো। এতোগুলো বছরপর ডায়েরিটা নিয়ে বসলাম, খুলে দেখি তার পাতায় পাতায়
আমার জীবনের সবচেয়ে গভীর অনুভূতি গুলো লুকিয়ে আছে। তারুণ্যের এক উদ্ভাসিত সময় গুলো
ঘুমিয়ে আছে। তাজা গোলাপের পাপড়ি ঠিক যেভাবে রেখেছিলাম, কালসে রঙে শুকিয়ে পাপড়িগুলো
সেভাবেই আছে। নিজের লেখাগুলো পড়ে নিজেই বারবার অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল লেখাগুলো
হয়তো আমার নয়। মনের ভেতর একটা কথা উঁকি দিলো; ভালোবাসা হয়তো ছিল আমার মাঝে কিন্তু
এখন নেই, এই ইহকালীন বাস্তবতায়।
কিছু পুরোনো কবিতা পড়ে অবাক
হয়ে যাই, আবার হাসিও পেলো। প্রত্যেকটা পাতার কালো অক্ষরে কেবল ভেসে আসলো কিছু
প্রিয় মানুষের মুখ-খুনসুটি লুকোছাপ-অভিমান ভাংগানো বিকেল। আর চোখের সামনে ভেসে আসছিলো
রাস্তায় দেখা হওয়া ভদ্রলোকটির মুখ! যে ভদ্রলোকটি, অর্ণার বাবা ছিলেন!
অর্ণা... ভালোবাসি নাকি বাসতাম...
মেয়েটার অনেক বড় স্বপ্নপূরণের গল্প দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া। কতোগুলো বছর এখানে আমি
এভাবে, কেমন অস্তিত্বহীন... আজকে সকালে অর্ণার মেইলটা পড়ে মনে হয়েছিলো হাওয়া বদলের
গাঢ়তা তারই বেশি। অর্ণার বাবাকে কেনো যে চিনতে পারিনি তখন সেটা এখন বুঝেছি। ভালো
থাকার অজুহাতে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাওয়া। আসলে আমিও রোবট হয়ে গেছি। এই বাস্তবতার জরাজীর্ণ
ক্লেদ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারিনি, বরং হেরে গিয়েছি প্রতিনিয়ত নিজের কাছে। এই
প্লাবনের দর্শন সম্ভাষণ ভেসে যেতে পারেনি বরং ডুবে গেছে... ডুবে যাচ্ছে রোজ...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন