''সবুজ স্মৃতি'' পর্ব-৬

Picture Credit: Nuran Durdany

সেইদিন ঘাসে উপর বসে প্রথমবার মন ভরে আকাশ দেখেছি। আকাশের মাঝে কত যে রঙ! কিছুক্ষন পর দেখি সাদা সাদা কি জানি উড়ে বেড়াচ্ছে। অনেকক্ষন নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে এমন লাগে। কিছুদিন আগে বরিশালে ঘুরতে গেলাম। জীবনের প্রথম রাতের লঞ্চে ভ্রমন। রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলো, কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। চোখ বন্ধ করে কেবিনে চুপচাপু ঘুমাতে চেষ্টা করলাম, ঘুম আসছে না। একটু পরপর চোখ খুলে ঘড়ি দেখছি। রাত এক’টা-দু’টো এভাবে আরো কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকা। আর থাকতে পারছিলাম না ওভাবে। তখন সময়টা রাত তিনটার কাটায়, উঠে পড়ি। আস্তে করে গেট খুলে বের হয়ে যাই। মামা আর মামাতো বোনটা ঘুমাচ্ছে! বাইরের একটা চেয়ারে বসি। চারপাশে অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। প্রচুর বাতাস। সারা লঞ্চ সাড়া শব্দহীন। শান্ত পরিবেশ। পানির কে সরিয়ে লঞ্চটা এগিয়ে যাচ্ছে, শুধু তারই শব্দ হচ্ছে!

খুব বাতাস বইছে, গহীন অন্ধকার। একটু পর পর দূরের লঞ্চগুলো আলো জ্বালাচ্ছে আর আমাদের লঞ্চটাও চারপাশে একটু পর পর আলো ফেলছে, দেখে নিচ্ছে পথ! এই দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে কি মনে করে জানি আমি হেটে চলে গেলাম লঞ্চের সামনে, উপরে তাকালাম দেখলাম পৃথিবীর তারা গুলো কে! এত সুন্দর করে জ্বলছে তারা গুলো। কোটি কোটি তারা হাসছে। তখন আমার কাছে মনে হলো আকাশে ওদের হাজার বছরের পুরোনো হাসি। মুগ্ধ, বিস্মিত! সবাই ঘুমাচ্ছে শুধু আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। আশে পাশে কেউ নেই, পানির প্রচুর ঢেউ!! একবার মনে হলো আমার মতো করে, কেউ কি এই তারার হাসিগুলো কখনো উপভোগ করছে? পৃথিবী টা কত সুন্দর। কত সুখী আজ রাত, এই আজকের তারারা! নিজের মাঝেও সুখী ভালো লাগা অনুভব হলো! অদ্ভুত সুখ!

 একটু পর টের পেলাম হাত অনেক ঠান্ডা হয়ে গেছে। প্রচুর বাতাস গায়ে লাগছিল তাই ভেতরে চলে গেলাম, বসলাম চেয়ারে। বসার পর মনে হলো আবার তারা গুলোকে দেখি। কিন্তু তাকিয়ে দেখি আকাশে কোন তারা নেই! চারপাশে যেমন অন্ধকার আকাশেও। চারপাশের অন্ধকার আর আকাশের কালো রাতটা এক সাথে মিশে আছে! আকাশে সেই হাসিময় তারা নেই, বিশ্বাস হচ্ছিলো না। এমন কেনো হলো, তখন বুঝতে পারিনি, এখনো না!

অদ্ভূত একটা অনুভূতি নিয়ে তাকিয়ে দেখলাম আকাশের রঙের বদল হচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকালাম তখন সাড়ে তিন, বসে আছি। লঞ্চের ইঞ্জিনের শব্দ ছাড়া,পানির স্রোতের শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। মাঝে মাঝে আলো দেখা যাচ্ছে! পানির মাঝেও আলো? কিছু সময় পর খুব ভালো করে লক্ষ্য করি, দেখি অনেক দূরে অন্ধকারে মাছ ধরছে জেলেরা। মিটমিট করে তাদের নৌকায় আলো জ্বলছে। তাকিয়ে আছি পানির দিকে অন্ধকারের দিকে, আকাশের দিকে। ভেতরের অনুভূতি শব্দহীন। আকাশের দিকে আবার তাকালাম দেখলাম আকাশটা কে আবার ভালো মতো। এক লাল আভায় ভোরের রঙ একপাশে আর চারপাশ অন্ধকার! আস্তে আস্তে যে ভোর হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে আকাশের রং কত পরিবর্তন হচ্ছিল, নিজের চোখে না দেখলে বনর্না করা যাবে না। আকাশে রঙ ছুটাছুটি করছিল একটু একটু করে।

এবার ঘড়ির দিকে তাকালাম সময় তখন প্রায় ৪ টা ৪০ এর কাছাকাছি, অনেক দূরের আলো দেখা যাচ্ছে। বুঝতে পারলাম কিছু সামনেই লঞ্চঘাট, ভোর ৫ টার দিকে পৌঁছে গেলাম। চলে গেলাম ভিতরে মামা কে উঠাতে, সব ঠিকঠাক করে বের হলাম। রিক্সা নিলাম বরিশাল শহর তখন পুরো শান্ত, আকাশের দিকে তাকালাম দেখলাম ভোরের আলো, ঐ তো সকাল হচ্ছে!

বরিশালে সে দিন একদিনের জন্য ঘুরতে গেলাম খালার বাসায়। ফেসবুকে স্ট্যাটাস এ তার আগের দিন জানতে চেয়েছিলাম দেখার মতো কি আছে বরিশাল শহরে, তখন ব্লগের সন্ন্যাসী ভাইয়া বলল 'দুর্গাসাগর' আর 'বায়তুল আমান জামে মসজিদ' আছে। খালার বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করেই, কাজ্বিনকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম ঘুরতে। খুব তাড়া ছিল কারন সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দ্যেশে রওনা দিতে হবে। ছোট্ট ক্যানন-ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম ২ জন। বাসে উঠলাম জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম, সাদা মেঘ ভাসছে নীল আকাশে। চোখের মধ্যে ভেসে উঠলো রাতের আকাশের দৃশ্য! একটা জিনিষ ভাবলাম তখন, কাল রাতে আমি একা জেগে ছিলাম না। আমার সাথে আকাশটা ও জেগেছিল। আসলে আকাশ প্রতিদিন ওভাবেই জেগে থাকে! আকাশ কাল রাতে আমার সাথে খেলা করেছিল, তাই তো মনে মনে কোন ভাবনা কাজ করেনি, নিজের সাথে নিজের কথোপকথন হয়নি। শুধু আকাশের খেলা দেখেছিলাম। তাই তো তাকে বার বার খুঁজে ফিরেছি, তার রং বারবার দেখতে চেয়েছি তাকে! ভোর রাতের আকাশটা আমাকে ব্যস্ত রেখেছিল খুব! তার এক একটি রুপ আমার সামনে হাজির করলো। আমিও মন ভরে তাকে দেখছিলাম, নিজেকে ক্লান্ত মনে হয় নি তখনও!

বাসে মানুষের হইচই কানে আসছে খুব। নীল আকাশ থেকে চোখ টা কে সরিয়ে নিলাম, চোখটা একটু বন্ধ করলাম। রাতের আকাশের বুকে সেই তারার হাসি টা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সবকিছু অন্যরকম মনে হল; চোখ খুলতেই ভেতর থেকে এক মন দীর্ঘশ্বাস!

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ