অরুণ
Picture Credit: Nuran Durdany |
জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছিটে আসছে অনবরত, গায়ে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে। একবার মনে হল বারান্দায় গিয়ে বৃষ্টির সাথে খেলা করি, একটু মুখটা কে একটু ভিজিয়ে আসি। নাহ হবে না এভাবে। বৃষ্টির খেলাটা অন্যরকম মাঝে মাঝে চাপা কান্নার সাথে দেখতাম বৃষ্টি ঝরতো অথবা ডায়েরীর ছেড়াপাতাগুলো টুকরো কাগজ হয়ে ঝরে পড়তো বৃষ্টির মতো। আর তখন পানির মধ্যে বৃষ্টির ঝিরঝিরে ফোঁটা গুলোকে দেখা যেতো এই শহরের দালান, ছাতাবিহীন মানুষ আর সবুজপাতাকে স্পর্শ করে বৃষ্টি নেমে আসতো মাটিতে, মিশে যেতে চাইতো। চারপাশ খুব শান্ত। বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
অরুণ হেঁটে যাচ্ছে, বৃষ্টিতে ভিজচ্ছে সে। যতক্ষন
ভালো লাগবে ততক্ষন হাঁটবে সে, কিন্তু কেনো? এই প্রশ্ন করলেই সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারন সে জানে না 'কেনো' এর উওর! পিচঢালা পথে হেঁটে যাচ্ছে। একটা গাড়ি
দ্রুত চলে গেল তাকে আরোও ভিজিয়ে দিয়ে। একরাশ পানিতে আবার সে ভিজে গেলো, আর মুচকি
হাসল।
অরুণের আপন মনের কথোপকথন;
বাসা থেকে যখন বের হচ্ছি তখন
মা বলল আজ জ্বর আসবে। আমার কোন দিন জ্বর আসেনি। মা আজ কেমন করে জানি তাকিয়ে ছিল। মাঝেমাঝে
মায়ের জন্য খুব মায়া হয়। সকালে এক গ্লাস পানি গেয়ে বের হয়েছি, মা বের হওয়ার আগে বারবার বলল
নাস্তা খেয়ে বের হতে। নাস্তা খেয়ে বের হওয়াটা উচিত ছিল। বলা তো যায় না যদি মায়ের
হাতে বানানো খাবার আর কোনদিন যদি না খেতে পারি! এই বৃষ্টিটা কে দেখে আর লোভ
সামলাতে পারলাম না। (হাত ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে) সকাল ৭টায় বের হওলাম আর এখন প্রায় ১০টা
ছুঁইছুঁই। হুম মোবাইলটা বন্ধ করে রেখেছি। আল্লাহ জানে আজ কতজন ফোন করেছে আর আমাকে
গালি দিয়েছে। অনেকক্ষন তো হল আর কতক্ষন বৃষ্টি হবে?
অরুণ মনে মনে কথা বলতে বলতে
এবার দাড়িয়ে গেল। সে তার বন্ধুর বাসার সামনে চলে এসেছে। দৌড়ে বন্ধুর বাসার ছাদে
চলে গেল। কিছুক্ষন পায়চারী করল। এবার সে আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে বলতে লাগল; এই
বৃষ্টি তুমি আজ কখন থামবে? তুমি জানো না আমি অনেক ব্যস্ত মানুষ। আমার অনেক কাজ আছে। তুমি এভাবে
সারাদিন.... আজ বাড়ি যাবে না? আজ এত কিসের কষ্ট বলতো?
কে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে, আমাকে বলো। অনেক তো হল
এবার থামো, প্লিজ!
বৃষ্টি এবার গুড়ি গুড়ি পরছে।
অরুণ তা দেখে হেসে দিল। বলে বসলো, অনেক থ্যাংক্স বৃষ্টি... অনেক..
শোন বৃষ্টি, এত অভিমান করতে
হয় না। আমি তো তোমার কাছে একদিন না একদিন আসবই, এত অভিমান ভালো না! কথা বলতে বলতে অরুণ
হারিয়ে গেল।
অপর পৃষ্ঠার গল্পে;
অরুণ কে অনেক খোঁজাখুঁজি করে
সেই দিন আর পাওয়া যায়নি। তার সেলফোনটাও বন্ধ। দু’দিন পর অরুনের বন্ধুর ছাঁদ থেকে
তাকে উদ্ধার করা হয়। হসপিটালের কৃত্রিম শ্বাস দিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা। অরুণের
শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু অরুণ আর ফিরতে পারেনি।
বৃষ্টির ফেরা;
অরুণ কে মাটি দিয়ে আসার পর হঠাৎ
কড়া রোদ্দুরের মাঝে খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হল। সময় পেরিয়ে রোদ আড়ালে, মেঘের
আনাগোনা। টানা চারদিন শহর জুড়ে তুমুল বৃষ্টি ঝরলো। সেই টানা চারদিনের বৃষ্টিতে
শহরটা ডুবে গেলো। তারপর বৃষ্টিকে আর দেখা যায়নি অনেক মাস। অসহ্য কড়া রোদ শহরময়,
যান্ত্রিকতার ভোগান্তি। সবাই বৃষ্টির খোঁজ চাইছে। আবার মেঘের দেখা। অদ্ভুত মেঘ,
বৃষ্টি হবে হবে করছে। অথচ মেঘ ফেটে রোদ বেরিয়ে পরলো আর সেই রোদেই বৃষ্টির দেখা
পাওয়া গেল। ঝুম বৃষ্টি... ঝুম বৃষ্টি...
বৃষ্টির প্রতি কারো কোন
ক্ষোপ নেই, অভিমান নেই।
কিন্তু দেয়ালে ঝুলানো অরুণের বৃষ্টিতে ভেজার ছবিটার প্রতি মায়ের খুব ক্ষোভ আর
অভিমান জাগে!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন