শিশুরা পবিত্র শুধু তাদের দারিদ্রতা!
সেদিন আমি,আম্মু,মামা আমরা মিরপুরে একটা কাজে যাচ্ছিলাম। যখন হোটেল শেরাটনের সামনে এসে
জ্যামে বসে আছি তখন অনেক পথশিশুরা পপকর্ন, পানি, ফুল ইত্যাদি নিয়ে আসে। এর আগে যেটা বলতে চাই আমার মামা ভীষন হিসেবি লোক।
কোন কাজ করার আগে চিন্তা করেন কাজটা করলে লাভ হবে, না কি লস
হবে তারপর সে সেই কাজে হাত দেয়। তা এবার কথায় আসি, সেদিন একটা ছোট ছেলে অনেক
গুলো গোলাপ ফুল নিয়ে এসে বলে গোলাপ ফুল নিবো কিনা। আমার ছেলেটা কে দেখে খুব খারাপ
লাগে, তাই আমি সব ফুল কিনে ফেলি। ছেলের থেকে যখন ফুল কিনছি
মামা তখন শুরু করলো; বাবার টাকা-পয়সা তাহলে এভাবে নষ্ট করো। এই কাঁচা ফুল কিনে
তোমার কি লাভ হবে, শুকিয়ে গেলে ফেলে দিতে হবে। এই ফুল গুলো দিয়ে কি টাকা
আসবে।শুধু শুধু টাকা নষ্ট, এরচেয়ে টাকা গুলো দিয়ে কিছু খেলে
লাভ ছিল। মামার সব কথা চুপ করে শুনলাম। আমার আবার প্রচুর রাগ। ছেলেটা সামনে ছিলো
বলে কিছু বলিনি। ছেলেটাকে টাকা দিলাম, ছেলেটা খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে চলে
গেলো।
রেগে গেলে আমি চেঁচামেচি করি কিন্তু ছেলেটা চলে যাওয়ার পর চেঁচামেচি না করে মামাকে খুব শান্ত গলায় বললাম;- আমি যে টাকা দিয়ে ফুল কিনেছি তা আমার জমানো সব নতুন টাকা। মামা বলে বসলে; তোমার জমানো টাকা দিয়ে অন্য কিছু করতে পারতে, খেলেও তো লাভ ছিলো তাই বলে ফুল কিনেছো এখন কি করবা? তারপর বলে বসলাম; শুনুন মামা আমার বাবা আজ উপার্জন করছে বলে আমরা খেতে পারছি, চলতে পারছি। আর প্রতিদিন ৪০-৫০টাকা আমরা এমনি কত খরচ করছি যা কিনা গনণায় পড়ে না। কিন্তু চিন্তা করেন একটা ছোট শিশু নিজে রোজগার করে খাচ্ছে, সংসার চালাচ্ছে। তাকে কী উচিত না আমাদের একটু সাহায্য করার। আর ওই শিশুতো ভিক্ষা করছে না, কোন কিছুর বিনিময় সে অর্থ যোগাচ্ছে শুধু মাত্র আজকের দিন একবেলা খাওয়ার জন্য। আমরা তো প্রতিদিন খেতে পারছি, ওরা কি পারছে?? আজ আমার টাকা দিয়ে ওই শিশু যদি কিছু খেতে পারে, সেটাই তো আমার কাছে বড় কথা। আর সব সময় সব কাজে লাভ চিন্তা করবেন না। আম্মু বুঝে যায় আমি রেগে গেছি। মামা আমার কথা শুনে সম্পূর্ন চুপ। আমি চুপ করার পর একটু অন্যরকম হয়ে যাই প্রথমবার মামার সাথে কীভাবে এসব কথা বলে ফেললাম!
আমরা
তিনজনই চুপ। আমি গোলাপ ফুল গুলো নিয়ে বসে আছি। আর গোলাপের দিকে তাকাতেই সেই শিশু
ছেলেটির শেষ হাসিটা আমার চোখে ভেসে উঠলো। ফুল গুলো যেমন পবিত্র, শিশু গুলোও তেমন
পবিত্র শুধু তাদের দারিদ্রতা তাদের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তবে সেই গোলাপ ফুল গুলো এখনো আমার কাছে আছে। আমার
ডায়েরীর প্রতিটি পাতায় পাতায় সেই শুকনো গোলাপের শেষ ঠিকানা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন