''সবুজ স্মৃতি'' পর্ব-৮
Picture Credit: Nuran Durdany |
শেষ যেবার কাজ্বিনদের সাথে
নানু বাড়ি যাই যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। হাত-মুখ ধুয়ে দ্রুত বের হয়ে পড়ি কারন আগে
চারপাশ ঘুরে না দেখলে মনে একদমই শান্তি লাগবে না। পিচ্চি কাজ্বিন কে নিয়ে অনেকক্ষন
হাঁটাহাঁটি করার পর, চোখে পড়ে একটা সুন্দর জায়গা। একপাশে ধানক্ষেত আরেক পাশে থই থই
পানি আর মাঝখানে সরু পথ এবং পথের মাঝে দু'টো নারকেল গাছ। আমি হেঁটে সেই পথেই যাই.. নারকেল
গাছের নিচে বেশ কিছু সময় চুপ করে বসে পানিতে পা ভিজানো আর পাখি দের নীড়ে ফেরা
দেখা!
বাড়ি ফিরে রাতে সব কাজ্বিন
আর গ্রামের পিচ্চিরা মিলে গভীর মনোযোগে জীন-ভূতের গল্প শোনার পালা। সেউ সাথে ভয়ে
কাঁপাকাঁপি। পুকুর ঘাটে বসে সবাই গল্প শুনছিলাম। সবাই কথা বলতে বলতে একটা সময় চুপ হয়ে যায় আর আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি তারাদের
মেলা বসেছে। সেই দিন প্রথম দেখেছিলাম তারারা কিভাবে ছোটাছুটি করেছে এক প্রান্ত
থেকে অপর প্রান্তে। একটা সময় সবাই ঘরে ফিরলাম। ঘরে এসে আবার গল্প শুরু সেই ভূত-জ্বীনের।
তখনো গ্রামে কারেন্ট নেই মিটমিট করে হারিকেন জ্বলছে। সবাই খাটের উপর গোল হয়ে বসে
আছি। পাশে জানালা একটু পর পর বাতাস আসছে। প্রত্যেকের গল্প শুনতে শুনতে এবার আমার
বলার পালা আসলো। কিন্তু কি বলি! তাই তাদের কে সত্যি ঘটনাটা শোনালাম।
তখন আমি আরও অনেক ছোট। সন্ধ্যা
হলে আমার মন খারাপ হয়ে যেতো। আর কোন কারণ ছাড়াই কান্না করতাম। সারা রাত ঘুমের ভেতর
কথা বলতাম। আমার না কি আলগার সমস্যা আছে, পেত্নী তো! প্রত্যেক সন্ধ্যায় আমার মুখের
রং পরিবর্তন হতো। তখন এক কাজ্বিন বললো; তুমি মজা করছো। আমি তখন উত্তর দিলাম ‘না’। কথাগুলো বলতে বলতে আমি হাসছিলাম। তারপর
বলতে লাগলাম; আমাকে হুজুরের কাছে নিয়ে
গেলে, তিনি বলে বসেন বাতাসের ভেতর আমার সমস্যা আছে। তাই তাবিজ দিলেন। আর খুব খারাপ
আমার সঙ্গী-সাথী তারা বাতাসের ভেতর ঘুরে বেড়ায়! বলতে বলতেই হঠাৎ করে অনেক জোরে
বাতাস আসলো আমার চুলগুলো উড়তে লাগলো। গল্পের ঘোরে বাতাসের খেলায় আমার চারপাশে সবাই
ওরে বাবারে বলে চিৎকার দিয়ে সরে গেলো। তাদের এমন কান্ড দেখে আমি উচ্চস্বরে হাসতে
লাগলাম। খুব ভয় পেয়েছিল সবাই...
নানু বাড়িতে গেলে ভোরে ঘুম
থেকে উঠে পুকুরঘাটে পা ভিজিয়ে বসে থাকতে বেশি ভালো লাগে। তারপর হাঁটাহাঁটি! আর দাদুর
বাড়িতে গেলে পুকুরে পা ভেজানোর সুযোগ নেই। তাই ঘুম থেকে উঠে যতদূর চোখ যায় জমির
আইলপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রেললাইনের কাছে যাওয়া। কখনো বা নদীর পাশে বা ব্রীজের উপর
দাঁড়িয়ে থেকে নৌকার মাঝিদের মাছ ধরার দৃশ্য আর সূর্যোদয়। চারপাশে ব্যস্ততা বেড়ে
যাওয়ার আগেই ফিরে আসা হয়...
শেষ যেবার কাজ্বিনদের সাথে
নানু বাড়ি যাই। তখন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো। কিন্তু কেউ সেই বৃষ্টিতে ভিজলাম না।
বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই সবাই উঠান ঘরে গিয়ে বসে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকি। চারপাশে
শুধু বৃষ্টির শব্দ। আর টিনের চালে শব্দটা অন্য রকম শোনায়। হঠাৎ করেই পিচ্চি কাজিন
টা বলে উঠলো আচ্ছা আপু আমাদের তো এভাবে আর কোন দিন দেখা হবে না, তাই না? ওর প্রশ্ন শুনে তখন বলে উঠি হতেও পারে। সেইবার সবাই মিলে একসাথে ঢাকায়
ফেরা হয়। লঞ্চে অনেক মজা করি। যখন লঞ্চ ভিড়লো তখন এই শহরে ঝুম বৃষ্টি নামলো।
বৃষ্টি দেখে পিচ্চি কাজ্বিনটা কে বললাম; দেখ আমাদের শেষটা বৃষ্টি দিয়ে দারুন না?
পিচ্চিটা কিছু বুঝলো কিনা জানি না, তবে বিদায় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেই যার যার গন্তব্যে ফেরা...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন