হায় রে বই মেলা!
Picture Credit: Nuran Durdany |
অনেক দিন ধরে বইমেলায় যাবো যাবো করছি। অথচ কেউ নিয়ে যাচ্ছে না। ভাইয়া কে বললাম সে তো এক কথায় "না", ভাইগ্না কে বললাম; সে বলল যাবে। কখন? জানতে চাইলে বলল; ১২ টায়! আর আমি যাতে আগেই তার বাসায় চলে যাই। যথা সময় গেলাম কিন্তু হায়! গিয়ে দেখি ভাইগ্না তৈরি হয়নি। বললাম, যাবি না? তার হাবভাব দেখে বুঝতে পারলাম, যাবে না। প্রথম বলল যাবো, দাঁড়া। একটু পর বলল; আসলে আমার কাজ আছে আর ভালো লাগছে না, আজ থাক পরে যাবো। আমার তো মনটাই খারাপ হলো কিন্তু কিছু করার নেই। পরে বিকেলে আপা বাসায় এসে বলল ভাইগ্না তার বন্ধুদের সাথে বই মেলায় গিয়েছে। শুনে তো মনে হচ্ছিল ভাইগ্নাটা কে ফোন করে ঝাড়ি মারি। অবশ্য মেরেও লাভ নেই; আমার মত মানুষের সাথে কেউ যেতে চায় না, কারো সাথে নিতে চায় না। কেন এমন করে তাও জানি, তবে আমার কিছুই করার নেই। আমি আমার মত। পরের দিন ২৪শে ফেব্রুয়ারী, আম্মু গুলশান যাবে। আম্মু বলল চল গুলশান থেকে ফেরার পথে বইমেলায় যাবো। ঠিকাছে! যেই কথা সেই কাজ, এক লাফে আমি রাজি।
গুলশানে যাওয়ার পর দুপুর
২টায় বইমেলায় যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু দেরী হয়ে যাওয়াতে রওনা হলাম বিকেল ৪টার
দিকে। সি.এন.জি খুঁজতে শুরু করলাম। তখনই কেন জানি মনে হল বইমেলায় যাওয়াটা ঠিক হবে
না। যাক পেয়ে গেলাম সি.এন.জি। রাস্তায় সেই জ্যাম!
অবশেষে বইমেলার দেখা পেলাম
আর মেলার সামনে যেতেই দাঁড়িয়ে ছিল রঙ নিয়ে রংতুলি বালক। আমরা প্রবেশের সাথে সাথে ছোট্ট
মামাতো বোন এর হাতে আর গালে একেঁ দিলো। আম্মু একদমই পছন্দ করেনি, তাই তাদের বলল;
দেখুন টাকা-পয়সা কিন্তু দিতে পারব না। আমরা কিন্তু এঁকে দিতে বলিনি। কে শুনে কার
কথা! আকাঁ শেষ, তখন চাইল টাকা। আম্মু তো দিবেই না। কি এক অবস্থা! পরে ১০টাকা দিলো।
দু'জন রংতুলি
বালক হওয়ায় যাহা বলল; এটা তে হবে না আমরা তো দু'জন। তারপর
আম্মু যা বলল শুনেই আমি হাসতে হাসতে শেষ, অবশ্য আম্মুও বলে ফেলে অনেক হেসেছে। আম্মুর
কথা, দু'জন টাকাটা কে দু ভাগ করে ছিড়েঁ নিন অথবা ৫টাকা করে
ভাগ করে নিন। আমি এইবার কথা বললাম, আম্মু কে বললাম কি বল তুমি এইসব। পরে আমার
জমানো নতুন ১০টাকা দিলাম। স্কুল পড়ুয়া মেয়ের জমানো টাকা। আসলে নিজের জমানো নতুন
টাকা কাউকে দিতে খুব কষ্ট হয়, তবে মাঝে মাঝে কিছুই করার থাকে
নাহ। নতুন টাকার যত্নই অন্যরকম। তবে বর্তমানে আমার কাছে নতুন ২৫ পয়সা থেকে শুরু
করে নতুন ৫০০ টাকা পর্যন্ত আছে। জানি কিছু দিন পর থাকবে না। যাক টাকার কথা আর নাই
বলি।
প্রবেশ করলাম মেলায়, হাঁটতে
হাঁটতে লাইনে দাঁড়ালাম। ২০০৮ সালে একবার আম্মু-আমি-ভাইয়া দুর্নীতি করে বইমেলায়
প্রবেশ করি। তাই মেলার লাইন দেখলে সেই দিনের কথা মনে পড়ে। এতো বড় লাইন হয়েছিল
সেইবার, পুরো দোয়েল চত্ত্বর পর্যন্ত। যে লাইন ধরে ভিতরে যাওয়াটা অনেক সময়ের
ব্যাপার। তাই দুর্নীতি করা। সেই আরেক কাহিনী...
যাক, যথারীতি মেলায়
প্রবেশ। কোনটাই স্টলে কি বই এলো ভাল মত দেখতে পারলাম না। শুধুমাত্র নামকরা
প্রকাশনি গুলো খুজেঁছি। কারণ আম্মু, চাচী, আর মামাতো বোন
ওরা হাঁটতে পারবে না। বেড়াতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। তাই আমি বলতে গেলে দৌড়ের উপর
ছিলাম, লেখক ''মোহিত কামালের'' বই খুজঁচ্ছি। পরে বিদ্যাপ্রকাশে
পেলাম ''মোহিত কামাল'' কে! কিন্তু যেই
বই টা খুচ্ছিলাম সেটা পাইনি। তার অন্য একটা বই কিনে অটোগ্রাফ নিলাম আর কিছুক্ষন
কথা বললাম, উনিও বললেন। মজার ব্যাপার উনি আমার বইয়ের উপর অটোগ্রাফ ছাড়াও আমার কথা
শুনে শুভ কামনা সহ ছোট কথা লিখে দিলেন। পরে তার কাছে জানতে চাইলাম আমি যে বই
খুজচ্ছি তার স্টলটা কোথায়, উনি বলে দিলেন। কিন্তু আম্মু বাসায় যাওয়ার জন্য তাড়া
দিলো। তাই সেটা কেনা সম্ভব হল না। আর যেই ভিড় উফ! যাক অনেক ভালো লাগল, কারণ যার বই কিনতে এসেছি তার সাথে কথা হওয়া, শুভ কামনা অন্য রকম ব্যাপার।
চলে যাওয়ার আগে উনি বললেন; আমি যাতে সব সময় হাসি খুশি থাকি। মজার ব্যাপার আমাকে
অনেকেই বলেছে আমি যাতে হাসি-খুশি থাকি। কেন বলে জানি নাহ। তবে আমি হাসি
সারাদিন.....
বইমেলা থেকে বের হলাম, দেখলাম
কাঠের চুড়ি নিয়ে বসে আছে ফুটপাতে। আম্মু আর চাচী আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল দেখ; চিল
উড়ছে আজ বিপদ আসবে। আমি বললাম কি বলল? হঠাৎ কোথ থেকে অনেক বাতাস, কি এক অবস্থা!
একটু পর বৃষ্টি নামা শুরু হল। আমরা তাড়াতাড়ি রিক্সা খুঁজতে শুরু করলাম। আম্মু আর
মামাতো বোন চলে গেলো। ঝুম বৃষ্টি শুরু হল, আমি আর চাচী একসাথে। চাচী কে দাড়াঁতে বলে,
আমি রিক্সা খুঁজতে শুরু করলাম। কিন্তু হায়! কোন রিক্সা যাবে না। তারপর হাঁটছি
হাঁটছি। আবার দাঁড়ালাম মাটির দোকানের কাছে। চাচীকে আবার দাঁড়িয়ে থাকতে বললাম। রিক্সা
খুঁজে চলছি কিন্তু কেউ যাবে না। হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি চাচী নেই। ভয়ে পেয়ে গেলাম
একটু। তার একটু পরেই খুজেঁ পেলাম। তারপর শিশু একাডেমীর সামনে গেলেই আব্বু ফোন করে
বসে। আমরা কোথায়? এই কথা জানতে চাইলে বলি; আম্মু চলে গেছে, আমরা
আসছি। একটা রিক্সা পেয়ে গেলাম এবং ততক্ষনে শিলা বৃষ্টি শুরু হল। প্রতিটা শিলা এসে
পড়ছিল হাতে-পায়ে। খুব ব্যথা পাচ্ছিলাম, চাচী বলল আল্লাহ তো
দিচ্ছে বৃষ্টি! সমস্যা কি, যাক এই বছর প্রথম বৃষ্টিতে আমরা
ভিজতে পেরেছি। আমাদের দুজনেরই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো। চাচীর তো কাপানি শুরু হয়ে
গেলো। সবাই দঁড়িয়ে আছে আর আমরা যাচ্ছি। আর আমার বার বার
মনে হচ্ছিল রিক্সা থেকে নেমে ভিজি, কিন্তু উপায় নেই। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো ভেবেছিলাম
আম্মু হয়তো, বাসায় পৌঁছে ফোন করেছে তাই ধরিনি আর যেই বৃষ্টি ধরাও সম্ভব নয়।
যাক আমার ঝুম শিলাবৃষ্টির
মধ্যে বাসায় চলে আসলাম কিন্তু ক্যারেন্ট নেই। বাসা প্রবেশ করে দেখি আম্মু আসেনি।
আব্বু বলল; তোমার আম্মু কোথায়?? আমি আর চাচী তো ''থ''। আম্মু কোথায় মানে, বাসায় আসেনি?
আব্বু বলল না! আমি মনে
করলাম আব্বু মজা করছে নাকি?
আমি বললাম, আব্বু মজা করছেন নাতো? আব্বু বললো,
আসেনিতো এখন। আমি বললাম আম্মু তো আমাদের অনেক আগে রওনা দিয়েছে, বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই।
আব্বু বলল তোর আপার বাসায় গিয়েছে নাকি? আমার মাথায় আর কিছুই
কাজ করছে না। আব্বুর ফোন দিয়েই ভাইগ্নাকে ফোন করি, জানতে চাইলাম মা গিয়েছে কিনা,
বলল না। ব্যাগ থেকে ফোন বের করলাম অন্য একটা নম্বর, সেখান থেকে কল এসেছে
৬ বার!!
দ্রুত ফোন দিলাম নম্বরে একজন
মহিলা ধরে বলল অনেক শিলাবৃষ্টি হচ্ছিলো আম্মু তার সাথেই ছিলো তারপর চলে গেছে। তিনি
আর কিছুই জানেন না। আমি ফোন রেখে দেই।
আব্বু বলল, কি হয়েছে। আমি কি বলবো বুঝতে পারি না, নিজে থেকেই বললাম আম্মু আসছে
রাস্তায়। মাগরিবের নামাজ পড়তে বাবা মসজিদে গেলেন। ভাইয়া আর চাচী কে বলি ভদ্রমহিলার
সাথে কথোপকথন, আম্মু রিক্সা থেকে নেমে বোনটা কে নিয়ে কোথায় জানি গিয়েছি পিচ্চি
বোনটার ঠান্ডায় কাঁপুনি ধরেছিলো। কিন্তু তারপর সেখান থেকে চলেও গিয়েছে, ভদ্রমহিলা
কিছুই বলতে পারেনি আর। এমন একটা দিনে ফোনটাও আমার কাছে!! কোথায় গেলো, আম্মু কি
ডাক্তারের কাছে গেলো। টেনশনে কিছুই মাথায় আসছে না আর আব্বু কে তো বলাই যাবে না।
ভাইয়ার তো ঝাড়ি, ফোন কেনো আমার কাছে? মেলায় প্রবেশের সময় বান্ধবী ফোন করে, তারপর
আমার কাছেই আম্মু রাখতে বলে। আমি কি জানতাম এমন হবে। নিজে কে খুব খারাপ মনে হল।
বইমেলা যাবার বায়না করেছি বলেই, আমার জন্য এত কিছু হতে যাচ্ছে। দ্বিতীয়বার ভদ্রমহিলাকে
ফোন করলাম, যে শেষে আম্মু কোথায় গেছে? বলল
আম্মু রিক্সায় বাসায় রওনা দিয়েছে, প্রায় ১৫-২০ মিনিট আগে।
কথা শেষ করেই আমি সোজা
আমার মতো নামাজ পড়তে গেলাম, মুনাজাত দিতে দিতেই আম্মু চলে আসে। পরে আসার সাথে সাথে
কি হল জানতে চাইলাম, দেখলাম পিচ্চিটা এখনও কাঁপছে। তাকে ঠিকঠাক করে দিলাম, আম্মুর
কছে জানতে চাইলাম কি হল?
আর আম্মু এসেই আগে জানতে চাইল; আব্বুর রাগ উঠেছে কি না? আমি বললাম, নাহ। আম্মু বলল রাগ উঠেনি! তাহলে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে।
আমি আর চাচী হাসতে হাসতে শেষ। পরে আম্মু তাদের ঘটনা বলা শুরু করলো; শিলা যখন পড়া
শুরু হল রিক্সা ড্রাইভার বলল অপেক্ষা করতে, ড্রাইভার একটা
ভীতু। আর পিচ্চির এমন কাঁপানি শুরু হল, তাই নেমে গিয়েছিলাম। নাট্যশালার পাশে। তোরা
রিক্সা পেলে কিনা, কোথায়, তাই জানতে ফোন করি। পরে বৃষ্টি থামলে রওনা দেই। আর তোর
কথা চিন্তা করি। আমার মেয়ের কি অবস্থা। ঠিক মত বাসায় যাচ্ছে কি, নাকি দাঁড়িয়ে আছে। আমার তো তোর জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছিলো।
আমি আম্মু কে বললাম, তোমার
চিন্তায় আমি শেষ আর তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো? উফ! আমি একা চলাফেরা করা
মেয়ে, কি যে বলল না। আমি গ্রাম থেকে একা একা বাসায় আসছি, কি মনে করো আমাকে?
উল্টো তোমাকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে আমি শেষ। আম্মু বলল; আজকে বিশাল
ইতিহাস হয়ে গেল। আম্মু আরও বলল; চিল উড়তে দেখলে আর ডলফিন পানির ওপরে উঠলে এর অর্থ
হলো বিপদের লক্ষণ। চাচী বলে বসলো দ্বিতীয় বারের মত বই মেলায়, আজকে এই অবস্থা হবে
কে জানতো। আমি বললাম জীবনেও পিচ্চিকে কোথাও নিবো নাহ। কিছু হলেই কাপাকাপি!! ততোক্ষণে
নামাজ পড়ে আব্বু বাসায় এলো, কারেন্ট আসেনি তখনো। পরে ভাইয়া,চাচী,
আব্বু-আম্মুসহ সবাই অন্ধকারে গল্প করলাম।
তবে একটা জিনিস ভেবে নিজের
কাছে ভালো লাগছিলো। এইবারের যে কটা বই কিনেছি সব নিজের টাকা দিয়ে। ভাইয়া তো এক একটা
বইয়ের দাম শুনেই দিলো বকা, এত টাকা কোথায় পেলাম। আমি বললাম; জমালাম। শুরু হল নানা
কথা আমার-ভাইয়ার, ঝগড়া যাকে বলে। আর আমি তো হাসছি রীতিমত এইসব ঘটনা ভেবে কি হয়ে
গেলো একটা সন্ধ্যায়, বইমেলায় থেকে বের হয়ে!!!!!!
হুমম ভালো লাগলো। :)
উত্তরমুছুনদুর্নীতির গপ্পো শুনতে চাই। ;) :P
ধন্যবাদ নিনি আমার ব্লগে এসে মন্তব্য করার জন্য। আর পড়ার জন্য।
উত্তরমুছুনআচ্ছা বলবো দুর্নীতির গল্প।
হুমমম ভাল
উত্তরমুছুনভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন.........:(
উত্তরমুছুনহুমমম... জট্টিল অভিজ্ঞতা।
উত্তরমুছুনNice Template of ur blog
উত্তরমুছুন