''সবুজ স্মৃতি'' পর্ব-২
Picture Credit: Nuran Durdany |
এখন সন্ধ্যেবেলা। যখন অন্ধকার নেমে আসে নানু বাড়ীটা খুব সুন্দর লাগে। তখন সন্ধ্যাকে ভোর ভোর লাগে। যদিও ইটের তৈরি দালানের কারনে দিন দিন সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। তবে আগের পরিবেশটা ভালো লাগতো খুব। সবুজে ঘেরা একটা অজপাড়া গাঁ। বৃষ্টি পড়লেই টিনের চালের ঘরের ভেতর রিনিঝিনি শব্দ বেজে উঠতো। রান্না ঘর বাঁশেরবেড়া দিয়ে তৈরি। বাড়িতে পাঁচ ঘর। কারেন্ট ছিল না বলেই হারিকেন আর টর্চলাইটের আলোয় রাতে চলাচল। সবার সাথে সবার মিল ছিলো অনেক। মুরুব্বীরা সন্ধ্যা হলে চলে যেতো বাজারে। ঘরের নারীগণ রাতে খাবার আর পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত থাকতো। আর কাছারি নামক যায়গায় সন্ধ্যায় বাচ্চারা পড়তে বসতো। একজন শিক্ষক সবাইকে সেখানে এক সাথে পড়াতো। যদি পড়া না পড়তো তাহলে পাঁচ বেত, নামাজ না পড়লে আরও পাঁচ বেত। কি যে নিয়ম ছিলো! আমি বসে বসে সব দেখতাম। সব কাজ মেয়েরা ঠিক মতো করতো বলে তেমন মার খেতো না কিন্তু অল্প কয়েক জন ছেলে ছাড়া বেশির ভাগ ছেলেই দশ বেত মার খেতো। পড়াশেষ হওয়ার আগে শুরু হতো শিক্ষকের বেত মারার পর্ব। আমার সামনে যখন মারতো তখন দেখতাম তারা খুব লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে চাইছে। শিক্ষক এত জোরে জোরে মারতো দেখেই খারাপা লাগতো। আর আমি বলতে থাকতাম; কি পড়ো নাই কেন, ব্যথা লাগে না? এই কথা শুনেই হো-হো করে হেসে দিতো সব। আর ছুটি হবার সাথে সাথে সবাই এমন এক আত্মতৃপ্তি তাদের চোখে মুখে যেনো জেলখানার জল্লাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। আমি আবারও প্রশ্ন করতাম যারা মার খেতো তাদের কে, শিখো নি কেন? ভালো লাগে না পড়তে? তখন তাদের উওর ছিল এমন 'স্যার দের মাথা সমস্যা আছে, কারা যে পড়াশুনা বানাইছে আল্লাহ জানে, পড়াশুনা মানুষ করে! এই গুলো তো কালা হরফ' কথা গুলো শুনে আমি যথারীতি হাসতে থাকতাম। কিন্তু সেই হাসি এখন আর নেই। এখন গ্রামে গেলে দেখি না কাউকে পড়তে কাছারি ঘরে যেতে। কারণ এখন আর সেই নিয়ম নেই। সব কিছু বদলে গেছে সময়ের সাথে। কেউ আর কাছারি ঘরে পড়তে যায় না, কোন শিক্ষকও আসেন না।
নানু বাড়ি গেলেই মনে হয় অনেক
কিছু নেই। সবাই বড় হয়ে গেছে। বাড়ীতে যে বাচ্চাগুলো আছে সবাই সবার মতো। চারপাশে অনেক
ইটের দালান তৈরি হয়েছে, এমনি কি মানুষের সম্পর্কের মাঝেও ইটের দেয়াল। বাড়িতে যে পাঁচ ঘর ছিল এখন
সেখানে পাঁচ ঘর নেই। এক-দুটো ঘর ছাড়া সব খালি পড়ে আছে, আর
ইটের দালান তুলছে প্রত্যেকেই। চারপাশে শুধু বিশাল হাহাকার। এভাবেই তো বদলে যাচ্ছে
সবাই...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন