''সবুজ স্মৃতি'' পর্ব-৩
Picture Credit: Nuran Durdany |
আমার বাই-সাইকেল ঘুরাঘুরি করা খুব পছন্দ। সাইকেলের পিছনে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। তখন আমি খুব ছোট, মনে আছে প্রথম যেদিন সাইকেলে চড়ি। আমি ছোটবেলা থেকে এমন উড়ুউড়ু মেয়ে যে, ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি।
কাজ্বিনরা অনেক বড় বড় আর আমি
তখন ছোট্ট মেয়ে। গ্রামে সেইবার সবাই একসাথে নানু বাড়ী যাই। ফড়িংবেলার ঘটনা, তখন আমি সব অবাক হয়ে দেখতাম!
কাজ্বিনকে দেখতাম সাইকেলে করে এদিক-সেদিক ঘুরতে। তাই তাকে সাহস করে বললাম; আমাকে সাইকেলে
করে ঘুরাবে? তখন সে আমাকে নিয়ে সাইকেল চড়ায়। প্রথম যখন
উঠবো অনেক ভয় পাচ্ছিলাম। সাইকেলের পিছনে বসতেই পারছিলাম না, কোন
মতে বসে চোখ বন্ধ করে কাজিনকে ধরে বসে আছি। একটু পর চোখ খুললাম দেখলাম সবাইকে
ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছি। আমার বড় ভাই সেই দিন রেগে ফায়ার কারণ, তাকে
না নিয়ে কেন আমাকে নিলো! সবচেয়ে মজার ব্যপার কাজ্বিন ভাইয়াকে একবার সাইকেলে চড়িয়ে আর ঘুরায়নি।
তো সাইকেল চলছে আস্তে আস্তে, হঠাৎ করে সাইকেল চালানোর গতি গেলো বেড়ে। একটা পুলের
উপর দিয়ে সাইকেল এত জোরে নামল, আমি ভয়ে চিৎকার দিতে লাগলাম। পরে আমার জন্য থামাতে
হলো। এতো জোরে চালালো কেনো? আমি আর চড়বো না বলে কান্নাকাটি
জুড়িয়ে দিলাম। পরে আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার নানুর বাড়ী। মোটামুটি
গতিতে চলছে সাইকেল। আস্তে আস্তে ভয় দূর হলো, তখন খুব মজা পেলাম। কাজ্বিনের নানু
বাড়ী গিয়ে ভালো লাগল। কাঁচা রাস্তা, আশে-পাশে কোন বাড়ি নেই। তিন’টে ঘর
আর চারপাশে শুধু গাছ-গাছ। সবার সাথে পরিচয় শেষ হলে কাজ্বিন নিয়ে গেলো আরেকটি
জায়গায়। এতো সুন্দর ছিলো খেতের
উপর বাঁশ দিয়ে তৈরি বসার জন্য বানানো হয়েছে মাচা। দক্ষিন দিকে মুখ করা। মাচায় বসলে
যাতে দক্ষিনা হাওয়া গায়ে লাগে। চারপাশে বড় বড় গাছগুলো ছায়া দিচ্ছে, দূরে পুকুরে টলমল পানি। বেশ কিছুক্ষন বসলাম। গল্প শুনলাম রাতের, আরো
বেশি সুন্দর লাগে তখন। চাঁদের আলো সম্পূর্ন মাচার উপর পড়ে, আকাশে
চাঁদ-তারা আর চারপাশের নির্জন অন্ধকার। মাচার নিচ থেকে শুরু করে চারপাশে ফসল আর ঐ
ছলছল টলটল পুকুরের গায়ে আলোর খেলা। গল্প শুনছি আর কিছুক্ষন পর পর
দক্ষিনা হাওয়া খাচ্ছি। কিন্তু রাতে আর থাকা হয়নি, সন্ধ্যার আগেই নানুবাড়ি ফিরে
আসলাম। প্রথম দিন সাইকেলে চড়ার পর থেকে যতদিন গ্রামে ছিলাম কাজ্বিন আমাকে ততোদিন ঘুরাতো আর আমার বড় ভাই তা দেখে রেগে যেতো। সে
এতই রেগে গিয়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত সাইকেল চালানো শিখে গেলো!!
এখন এইসব শুধু স্মৃতি! এখন
আর কারো সাথে নেই কোন যোগাযোগ। কাজিনটা আমাকে ভুলে গেছে কিনা জানি না। সবাই খুব ব্যস্ত
হয়েগেছি। কোন অনুষ্ঠান ছাড়া কারো সাথে কারো দেখা হয়না। সবাই সবার নিজের জগৎ কে নিয়ে
খুব ব্যস্ত। যদি কাজিনের সাথে দেখা হয়, কেমন আছো পর্যন্ত কথাশেষ! সাইকেলে চড়া, ঘুরতে যাওয়ার কোন কিছু নিয়ে গল্প হয় না।
সবাই বদলে গেছে সাথে আমিও! আমি তো আর সে ছোট মেয়েটি নেই, বড়
হয়ে গেছি। এখন শুধু মাঝে মাঝে ভেবে যাই, কেউ কি আমার মতো করে ভাবে এভাবে? এই স্মৃতিগুলোকে?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন