পড়তে বসলে আমার
জানালা দিয়ে একটা পুরোন বাড়ি দেখা যেত। সেই বাড়ির ছাঁদে শ্যাওলা, গালিচা বিছিয়ে বসে থাকতো।একটা
পেয়ারা গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। কিছু ইটের কনা পড়ে রইত অলস ভাবে। দুপুরের কড়া
রোদ দেয়ালের মাঝের শ্যাওলাকে ছুঁয়ে দিতে পারতো না, শুধু বৃষ্টি ছাড়া!
খুব সকালে
ছাঁদটা তে অনেক পাখি এসে বসতো আর কিচিরমিচির করতো। রাতে বেশ করে আকাশ দেখা যেত আমি
তা চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি । আমার মন খারাপের সাথী হতো ঝুলে থাকা ইট। কে কবে কি মনে করে,
দেয়ালের ইটের খালি জায়গায় একটা দড়ি দিয়ে ইট কে বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছিল কে জানে! একা
স্থির হয়ে ঝুলে থাকে। বাতাসে তা দোলে না। রোদ্দুরেও তা স্নান করে না ।নিচেও পড়ে যায় না।
একদম স্থির!
আমি কখনও কাউকে
হাত দিয়ে দেখিয়ে দিতাম না সেই ইটটি কে।
আমার টেবিলে বসে কারো যদি মন খারাপ হয়ে যেত ,তখন দেখতাম তাকিয়ে থাকত ঝুলে থাকা
ইটের দিকে। অনেক বার ভেবে ছিলাম ছবি তুলে রাখব। কিন্তু তুলবো তুলবো করে তোলা হলো
না। পুরোন বাড়ির ছাঁদে তেমন কেউ কোন দিন উঠেনি। কেউ কোন দিন খবর রাখেনি সেই ছাঁদের
এক কোণে সবুজ মেহেদি পাতার। এখন তো সব স্মৃতি হয়ে আছে.....
স্কেল-মিটারস,
কাগজের মাপ ঝোঁক। পুরোন বাড়িটা ভীষন পোড়ায়। যান্ত্রিক শহুরে ছাঁদের কোন সৌন্দর্য চোখে পরেনি কখনো অন্য আলোর
মানুষের কাছে, আসলে পরার কথাও না। বাড়ি ভেঙ্গে
ফেলার পর মাটির এক কোণে পেয়ারা গাছকে পড়ে থাকতে দেখে নিজের ভিতর টা তে যত না খারাপ
লেগেছিল, তার চেয়ে বেশি খারাপ
লেগেছিল ঝুলে থাকা ইটের জন্য।জানি
তার খবর কেউ কোন দিন রাখে নি, তার স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় আমার টেবিলের মানুষ গুলো কে ছাড়া
আর কাউকে কোন দিন ভাবায় নি। মাঝে মাঝে দু-এক'জন প্রশ্ন করতো ইট টা আর নেই, তাই না? নিরবতা ছাড়া
কিছুই নেই, শুধু মনে হয় ঝুলে
থাকা ইটের নিরবতা ভেঙ্গেছে.....
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন